মাহবুবুর রশিদ:
সময় বদলায়,প্রযুক্তির উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে দেশ, পৃথিবী চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক যাপিত জীবন,চিন্তা, রুচি,অভ্যাস। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষতায় জীবন হয়ে যাচ্ছে বড্ড বেশি যান্ত্রিক। আর তাই তো বর্তমান যুগকে তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ বলা হয়। অন্তর্জালে এখন বদ্ধ মানব সভ্যতা; বিশ্বজুড়ে এর অবাধ বিস্তৃতি। অন্তর্জালের (ইন্টারনেট) মোহজালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছে সবাই। প্রযুক্তির এই পালাবদলের সাথে তাল মেলাচ্ছে গণমাধ্যমের জগৎ। বদলে গেছে সাংবাদিকতার সনাতনী ধারা। প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে একবিংশ শতাব্দীর সাংবাদিকতা। খবর জানতে এখন আর কাগুজে সংবাদপত্র অথবা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের অপেক্ষায় থাকে না কেহ। অবশ্যই কিছু স্যাটেলাইট টেলিভিশন দর্শক টানতে তাদের অনলাইন টিভি ভার্সন চালু করেছে। অনিবার্য হয়ে উঠছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল,অনলাইন টেলিভিশন । দর্শক এখন সহজে বৈচিত্র্যময় সংবাদের ভিডিও ফুটেজ সহ সর্বশেষ খবর পেয়ে যাচ্ছে; হাতে থাকা স্মার্টফোনের মাধ্যমে, অন্তর্জালে ঢুঁ মেরেই। এই যুগে মানুষের প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের সহজলভ্য উৎস হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। আর এই ইন্টারনেট নির্ভর বিশ্বে ‘অনলাইন টেলিভিশন’ একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে গণমাধ্যম জগতে। তবে অন্তর্জালে মজা পাওয়া যায় যতটা সহজে অন্তর্জালের সাংবাদিকতা ততটা সহজ নয়। চ্যালেঞ্জিং। অনেক সংবাদ তাৎক্ষণিক পরিবেশন করতে হয়। চ্যালেঞ্জ এখানেই। নির্ভূল ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন- চাট্টিখানি কথা? গ্রামীণ জনপদে এমন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা আরো কঠিন বটে। তবুও অন্তর্জাল বা ইন্টারনেটের কল্যাণে মুহুর্তে দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলের খবর। এটাই আজকের বাস্তবতা। জীবনের কঠিন এক সত্যি হচ্ছে, বাস্তবের সাথে তাল মিলিয়ে চলা।
সিলেটের সীমান্তবর্তী একটি উপজেলার নাম হচ্ছে জকিগঞ্জ। সুরমা-কুশিয়ারাবেষ্টিত এই উপজেলায় জন্ম নিয়েছেন অনেক জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তি, যারা জকিগঞ্জের পাশাপাশি পুরো দেশকে আলোকিত করেছেন। এ উপজেলার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন ছিল একটি অনলাইন টেলিভিশনের। সেই চাহিদা পূরণে সবার আগে এগিয়ে আসে ‘জকিগঞ্জ টিভি’। জকিগঞ্জ টিভি ৮ বছর পেরিয়ে নবম বর্ষে পদার্পণ করলো। এটি জকিগঞ্জ টিভির দর্শক,শুভানুধ্যায়ীদের জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ। কারণ একটি মফস্বল এলাকা থেকে নিজস্ব অফিস,নিজস্ব টিম নিয়ে অনলাইন টেলিভিশন চালানো চাট্টিখানি কথা নয়। বিগত ৮ বছরে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষি মানুষকে জকিগঞ্জ টিভি কতটুকু দিতে পেরেছে সে বিচারের ভার না হয় দর্শকের উপর ছেড়ে দিলাম। তবে আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি যাত্রা শুরুর পর থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও রুচিশীল অনুষ্ঠানের কারণে দর্শক হৃদয় জয় করেছে জকিগঞ্জ টেলিভিশন। জকিগঞ্জ টিভির এমডি কলাকুশলী যারা আছেন সকলেই আমার পরিচিত। শুরুর দিকে এ পরিবারের সাথে যুক্ত ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী তরুণ কবি ও লেখক রেদ্বওয়ান মাহমুদ চৌধুরী। রেদ্বওয়ান মাহমুদের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় জকিগঞ্জ টিভি তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। গত ০৩ নভেম্বর ২০২২ তারিখে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান তরুণ এ উপস্থাপক। রেদ্বওয়ানের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্তবাসী করেন। আট বছরের সাফল্যের পথে জকিগঞ্জ টিভি স্থানীয় খবরের পাশাপাশি দর্শকদের কথা চিন্তা করে নানাবিধ অনুষ্ঠান প্রচার করে আসছে। আশা করি আগামীর দিনগুলোতে জকিগঞ্জ টিভি আরও এগিয়ে যাবে, সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে যাবে। আবারও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এগিয়ে চলুক জকিগঞ্জ টিভি, দীপ্ত হোক এ প্রতিষ্ঠানের পথচলা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক,কানাইঘাট প্রেসক্লাব ও চেয়ারম্যান কানাইঘাট টিভি