দ্বীনদার এক জননীর বিদায় । মুজতবা হাসান চৌধুরী নুমান

Spread the love

জকিগঞ্জের জামাল আহমদ ভাইয়ের (মহানগর তালামীযের দায়িত্বশীল) মায়ের ইন্তেকাল। দ্বীনদার এক জননীর বিদায়। তিনি আমাদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন, ফুলতলীর প্রতি তাঁর কী ভীষণ একটা টান ছিলো! অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি আমাদের সবার খবর জামাল ভাইয়ের কাছ থেকে নিতেন, আর বলতেন ‘ছাহেব বাড়ীর সবাইকে বলো আমার জন্যে যেন দোয়া করেন’ জামাল ভাই প্রায় ই ফোন করে বলতেন, ‘ভাইয়া! এইমাত্র আম্মা আপনাদের কথা বলেছেন’ ‘এখন ডায়ালেসিস করতে নিয়ে যাচ্ছি’ ‘এখন আই,সি,ইউ এর করিডোরে বসে আছি’ আজ এসব কথা ফুরিয়ে গিয়েছে। আজকে যখন বলেছেন ভাইয়া,অনেকদিন থেকে এখন ভালো, আমার মনে অজানা এক শংকা ভর করেছিলো। বলেছিলাম, আজকে সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করবেন, মুখ ফুটে ভয়ের কথা বলিনি, কিন্তু সে ভয় ই সত্য হলো। জিলহজ্জ মাস এলেই জামাল ভাইয়ের ফোন, “ভাইয়া, এবার ঈদে কোনোদিকে না গেলেও আমার বাড়ীতে আসতে হবে, আম্মা বলেছেন” অনেক সময় সময়াভাবে সম্ভব হতো না, তিনি আফসোস করতেন,তবে মনকে শান্তনা দেই গতবছর ঈদে আমি, গিলমান ভাইয়া,হুযাইফা গিয়েছিলাম। এবার একবছর পরে জিলহজ্জ মাসেই ঈদের ঠিক আগে আগে উনার ইন্তেকাল হলো, তিনি ভাগ্যবান এখন জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক চলছে এবং আজ সোমবার দিন। আল্লাহ তাকে রহম করুন,জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, উনার পরিবার-পরিজনকে সবরে জামিল দান করুন, আমিন। — (আমার জীবনে প্রথম আমি আমার মায়ের হাত ধরেই ফুলতলী ছাহেব বাড়িতে যাই। সেদিন ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)’র নূরানি চেহারা আমি দেখি। মা আমাকে ছাহেব কিবলাহ’র পুরাতন বাড়ির একটা জায়গায় রেখে বদরপুরী (রহ.)’র কলিজার টুকরা ছাহেবজাদী-কে দেখতে গেলে আমি এদিকে সেদিক ঘুরে বেড়াই। এটিই ছিলো এই বাড়ীতে আমার প্রথম বিচরণ। মায়ের কাছ থেকেই মূলত ছাহেব বাড়ির মানুষের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা পেয়েছি। আমৃত্যু তিনি আমাকে ছাহেব বাড়ির মানুষের প্রতি ভালোবেসে যাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। রাত-দিন যেকোনো সময় আমি যখনই বাহিরে থাকতাম মা রাগ করে জিজ্ঞেস করলে বলতাম ছাহেব বাড়িতে ছিলাম সাথে সাথে রুদ্রমূর্তির মত মুখখানা জান্নাতের আলোয় ভরে উঠতো। ছাহেব বাড়ির প্রতিটি মানুষের প্রতি মায়ের কি যে ভালোবাসা তা অনুভব ছাড়া ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আম্মার প্রতি ছাহেব বাড়ির সকল নাতিদের যে ভালোবাসা ও মহব্বত আমি দেখেছি তারও কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। যখনই দেখা হতো ছাহেব বাড়ির সবাই মা-জননীর কথা জিজ্ঞেস করতেন এখনো যখন দেখা হয় ভালোবাসা নিয়ে বলেন জামাল ভাই চাচির জিয়ারতে যাবো, আপনি কি বাড়ি আছেন? আমাকে ও আমার পরিবারের প্রতি ভালোবাসার উত্তম জাযা আল্লাহ আপনাদের দান করুন। — আম্মার ইন্তেকালের তারিখ আজ। মেমোরি মাঝে ভেসে উঠলো আম্মাকে নিয়ে লেখা আমাদের পরিবারের সবার প্রিয়জন ছাহেব কিবলাহ (রহ.)’র সুযোগ্য নাতি, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযের ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুজতবা হাসান চৌধুরী নুমান ভাইয়ের অনুভূতি। সেদিন পড়া হয় নি, আজ একবছর পরে যখন পড়লাম চোখের কোণে অশ্রু ভরে গেলো। সবাই আম্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেনো জান্নাতে মা’কে এক টুকরো জায়গায় দান করেন। অনেকের লেখা পড়ছি আর স্মৃতিচারণ করা কথাগুলো ভারাক্রান্ত করে তুলছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি…..


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *